Posted on : Thursday, 8th February 24 , 05:28 PM
সম্প্রতি বেআইনি উপায়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে TRSG নামক একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে বেকারদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে । সেই সংগঠনের সাথে যুক্ত এক ব্যক্তি ভুয়ো D.El.Ed ডিগ্রি দেখিয়ে প্রাইমারির নতুন প্যানেলে নাম তোলেন । এর পরেই প্রকাশ্যে আসে Google Meet এ ওই ব্যক্তির মদ্যপ অবস্থায় শিক্ষকদের নিয়ে চূড়ান্ত অভব্যতা । যার screen recording সরাসরি XYNES এর হাতে ।
দীর্ঘ আইনি জটিলতা অতিক্রম করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করে বহু প্রতীক্ষিত প্রাথমিক নিয়োগের ৯৫৩৩ জনের প্যানেল । অনেকেই মনে করতে শুরু করেছিলেন এই প্যানেল হবে কলঙ্কমুক্ত । কিন্তু প্রকাশের ১ সপ্তাহের মধ্যে XYNES এর হাতে এলো এক চূড়ান্ত অযোগ্য প্রার্থীর মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার অস্বাভাবিক দৃষ্টান্ত । তবে কী দিনের আলো দেখার আগেই গ্রহণের গ্রাসে ৯৫৩৩ জনের প্যানেল ?
দেখা যাচ্ছে হাবরার জনৈক চাকরিপ্রার্থী দেবব্রত মল্লিক মাধ্যমিকে অঙ্কে ৩৪ , ইংরেজিতে ২৭ পেয়েও স্থান পেয়ে গেছেন নতুন মেধাতালিকায় । মাধ্যমিকের এ হেন রেজাল্ট দেখে হাসির রোল বাকি শিক্ষক সমাজের । এ যেন সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি " টুয়েলভথ ফেইল " এর নতুন সংস্করণ । শুধু তাই নয় খবর পাওয়া যাচ্ছে এই দেবব্রত মল্লিক যে D.El.Ed দেখিয়ে তিনি এই মেধাতালিকায় নাম তুলেছেন সেটি সার্ভিস রুল অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ ।
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে SSC গ্রুপ ডি এর মেধাতালিকায় নাম ওঠে এই ব্যক্তির । ২০১৮ সালে উনি গ্রুপ ডি এর চাকরিতে যোগদান করেন । উল্লেখ্য এই গ্রুপ ডি এর নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছিল । অধিকাংশ OMR sheet এর বিকৃতি সহ rank jumping এর একাধিক ছবি উঠে আসে এই SSC গ্রুপ ডি নিয়োগ তদন্ত থেকে । বর্তমানে এই মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মাননীয় বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে বিচারাধীন । সেই গ্রুপ ডি এর মেধাতালিকাতেও দেবব্রত মল্লিকের নাম দেখা যায় । কিন্তু মামলাটি বিচারাধীন থাকায় তাদের সকলের চাকরি বজায় রয়েছে ।
Group D এর বিতর্কিত মেধাতালিকায় দেবব্রত মল্লিকের নাম
২০১৮ সাল থেকে এই গ্রুপ ডি তে চাকরিরত অবস্থাতেই তিনি রেগুলার মোডে করে ফেলেন ২০১৯-২১ সেশনের ভুতুড়ে D.El.Ed । কীভাবে উনি রেগুলার মোডে দুই জায়গাতে উপস্থিত থাকলেন তাই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন । যেখানে তাঁর কর্মস্থল বিদ্যালয় পশ্চিম মেদিনীপুর হলেও D.El.Ed প্রশিক্ষণের কলেজ ছিল দুর্গাপুর ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যাণ্ড সায়েন্স। কীভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরে কর্মরত অবস্থায় রেগুলার মোডে দুই জায়গায় উপস্থিত থাকলেন সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন । কোনো প্রকার NOC না নিয়ে রেগুলার মোডে D.El.Ed করার সময় তিনি সরকারি খাত থেকে মাইনে হিসেবে ২ বছরে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা বেতন হিসেবে তুলেছেন । আবার সম্প্রতি বিভিন্ন D.El.Ed কলেজের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ না দিয়েই মোটা টাকার বিনিময়ে D.El.Ed ডিগ্রী ও মোটা নম্বর পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । পুরো ঘটনা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়ে যায় যে উক্ত D.El.Ed কোর্সের কোনো আইনি বৈধতা নেই i। আর এই বেআইনি D.El.Ed দেখিয়েই তিনি প্রাথমিকের নয়া মেধাতালিকায় নাম তুলেছেন।
তিনি ২০১৫ সালে টেট পরীক্ষা দিলেও এই টেটকে ব্যবহার করে এর আগে ২০১৭ সালে এবং ২০২১ সালে পরপর দু বার অকৃতকার্য হন । এবার প্যানেলে নাম উঠতেই তার বেআইনি D.El.Ed , মাধ্যমিকের রেজাল্ট সহ একাধিক বিষয় নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয় বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে। এর আগে এই ব্যক্তি বেআইনি উপায়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে The Rising Sun Group ( TRSG) নামক একটি প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন বলে অভিযোগ । তাঁর বর্তমান বিলাসবহুল জীবনযাপন তার আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেও অভিযোগ তুলছেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা ।বিষয়ে তাঁরা আয়কর দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং আদালতে মামলা করে তাঁর এই অবৈধ D.El.Ed এর ইস্যুটিকে তুলে ধরতে চাইছেন ।
শুধু তাই নয় , অধিকাংশ সময় সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে মদ্যপ অবস্থায় অভব্য আচরণ করতে দেখা গেছে । শিক্ষক সমাজ এবং অভিভাবকরাও তাঁর এই আচরণ ভালো চোখে নিচ্ছেন না । সম্প্রতি একটি google meet এ তাঁকে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে অশালীন বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে ।
অনেক যোগ্য প্রার্থী মনে করছেন শুধুমাত্র একজনের জন্য পুরো প্যানেলকে কলঙ্কিত করা উচিত নয় । এমনকি সম্প্রতি একটি রায়ের মাধ্যমে বিচারপতি রাজশেখর মান্থা এই মেধাতালিকাকে মান্যতা দিয়েছেন । অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপাতত কারো বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ উঠলে সম্পূর্ণ মেধাতালিকায় হাত না দিয়ে ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ওপরেই তদন্ত চলবে এমনটাই মনে করা হচ্ছে ।
© ALL RIGHTS RESERVED