by YouTech
Posted on : Wednesday, 14th February 24 , 06:43 PM
প্রথম পর্ব: ফাঁকা ফ্ল্যাটে মনুস্মৃতি
দ্বিতীয় পর্ব: শিক্ষামন্ত্রীর জালে SSC উকিল
SSC এর প্রাক্তন উকিল মেঘনাদ গাঙ্গুলি । এই মুহূর্তে হাতে তেমন কোনো মামলা পাচ্ছেন না । তাঁর বিদ্রোহী স্বভাবের জন্য কোলকাতা হাইকোর্টের বাকি উকিলরা খুবই পিছনে লাগে । তথাপি কথায় কথায় রেগে যাওয়া স্বভাবটা তাঁর যায়নি । সরকারের উকিল থাকাকালীন তাঁর প্রচুর টাকা বকেয়া আছে । সরকার পাল্টি খাওয়ার পর তিনি বর্তমান সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ হননি । ছোটবেলা থেকে একগুঁয়ে । পার্টিকে ভালোবাসেন। তাই সরকার পাল্টি খেলেও জামা পাল্টাননি উকিল হিসেবে । অতঃপর বর্তমান সরকারের চক্ষুশূল হয়েছেন । আগষ্ট পড়ে গেছে। বৃষ্টি আজও থামেনি । সারা কোলকাতা জলমগ্ন।
অনিমেষদের বীরভূমের গ্রামে ময়ূরাক্ষীর জল ঢুকে গেছে । অনিমেষ এখন ট্রেনে। শেষমেষ নৌকা করে বাড়ি পৌঁছতে হবে । না নদীতে নয় । বন্যামগ্ন গ্রামের ওপর দিয়ে যাবে অনিমেষের নৌকা ।ফেসবুক প্রোফাইলে নতুন ফ্রেণ্ড রিকুয়েষ্ট এল । খুলতেই দেখা গেল শুভব্রত পাঠিয়েছে । অনিমেষের অন্য একটা ফেসবুক পোষ্টে রিপোর্ট পড়েছে । ফেসবুকে ইয়াকুব মেননের ফাঁসির বিরোধিতা করেছিল অনিমেষ। গত পরশু দিন ৩০ জুলাই , ২০১৫ , ইয়াকুব মেননের ফাঁসি কার্যকর হয় । কিন্তু অনিমেষ জঙ্গিবাদকে মোটেই পছন্দ করে না । শুভব্রত প্রশ্ন করাতে অনিমেষ জানালো , " ইয়াকুব একজন জঙ্গি । কিন্তু রাষ্ট্র উদার । এই পার্থক্যটা থাকা উচিত । যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুহত্যা আর নিরস্ত্র শত্রুকে বন্দি করে হত্যার মধ্যে পার্থক্য আছে । যে কোনো মৃত্যু আমাকে কাঁদায় । ইয়াকুব আমাদের শত্রু । কিন্তু আমি চিরকাল ফাঁসির বিরোধী "
"তুই শালা কোনদিন , গারদে ঢুকবি । পুলিশ তোর কোনো যুক্তির চুলকানি শুনবে না । জঙ্গির ফাঁসির বিরোধী মানে তুইও জঙ্গি " - শুভব্রত বলল ।
অনিমেষ : "আমি জঙ্গিদের সহ্য করতে পারি না , কিন্তু ফাঁসি ... "
শুভব্রত : "তোর এই গান্ধীবাদ একদিন তোর সর্বনাশ করবে । অহিংসার চুলকানি একদিন তোর নিজের গাঁড়ে ঢুকবে । পুলিশ ক্যালালে তুই তোর যুক্তি মারাবি ??"
অনিমেষ : "পুলিশ না শুনুক আদালত শুনবে"
শুভব্রত : " কোনো বিচারক যদি sadist হয় তখন ?"
অনিমেষ : "কোনো বিচারক sadist হলেও আইন কখনও sadist হয় না ।"
শুভব্রত : " কানুন অন্ধা হো সাকতে হ্যায় লেকিন জাজ নেহি। তোর বাঁড়া খুব চুলকানি। বাড়ি পৌঁছালি ?"
অনিমেষ : " না ট্রেনে আছি । নেটের স্পীড কম । এখন রাখছি।"
ফেসবুকের মেসেঞ্জারে কথা চলছিল অনিমেষ আর শুভব্রতর।
অন্যদিকে SSC এর প্রাক্তন উকিল মেঘনাদ গাঙ্গুলির গাড়ি এসে দাঁড়ালো নাকতলার একটা বিরাট বহুতলের সামনে । সারা কলকাতার অনেক জলমগ্ন পথ পেরোতে হয়েছে । বৃষ্টি এখনও থামেনি । লিফ্টে উঠলেন ৫ তলায় । কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। তিনি এসেছেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অর্জুন চ্যাটার্জীর সাথে দেখা করতে । একেতেই হাতে কেস নেই । তার ওপর অন্যায়ভাবে তাঁর টাকা আটকে রেখেছে ওপর মহল । কত রথী মহারথী পাল্টি খেল । পাল্টি খাননি মেঘনাদ গাঙ্গুলি । আজও মনে আছে পার্টির হয়ে লড়া বহু কেস । হেরেছেন। জিতেছেন। তাঁর ভালোবাসার পার্টি এখন বিরোধী স্থানে । ক্রমশ তৃতীয় স্থানের দিকে এগোচ্ছে । তথাপি মেঘনাদ স্বপ্ন দেখেন একদিন ফিনিক্স হয়ে ফিরে আসবে তাঁর পার্টি । সেদিন এই সব অপমানের বদলা নেবেন তিনি । তা যদি না হয় তিনি হিমালয়ে চলে যাবেন অথবা বিরাট বিপ্লব করবেন অন্য কোনো ভাবে । ভালো হোক খারাপ হোক বর্তমান সরকারের ওপর শোধ তুলেই ছাড়বেন মেঘনাদ গাঙ্গুলি ।
তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অর্জুন চ্যাটার্জীর ফ্ল্যাটের দরজা খুললেন একজন কেয়ার টেকার । ভিতর থেকে কুকুরের আওয়াজ আসছে । মনে হয় ভিতরে একটা নয় দুটো কুকুর আছে ।
কেয়ার টেকার : কে আপনি ?
মেঘনাদ গাঙ্গুলি : "অর্জুন দা আপনাকে কিছু বলেননি ?"
কেয়ার টেকার : "না দাদা । বলেননি ।"
মেঘনাদ গাঙ্গুলি : "আমার শিক্ষামন্ত্রীর সাথে যে সকালে কথা হলো ।"
কেয়ার টেকার : "তাই বলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিয়ে আপনি নাকতলায় চলে আসবেন ?"
মেঘনাদ : "কে বলল নিইনি । সকালে আমি ওঁকে ফোন করেছি ।"
কেয়ার টেকার : "ছাই করেছেন । উনি আপনাকে নাকতলায় আসতে বলেছেন ?"
মেঘনাদ : " হ্যাঁ, বললেন তো ।"
কথাটা শোনা মাত্রই অর্জুন চ্যাটার্জীর ফ্ল্যাটের ওই কেয়ার টেকার আফিম খাওয়া চিড়িয়াখানার শিম্পাঞ্জির মতো খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠল । প্রায় ৪০ সেকেণ্ড তার হাসি চলল। আর সেই হাসি ফ্ল্যাটের নীচতলা থেকে উপরতলা অবধি গমগম করে উঠল । অবশেষে মেঘনাদ গাঙ্গুলি ধমক দিলেন ।
মেঘনাদ : এই আস্তে হাসুন । থুতু ছিটছে । এমন ভুতের মতো হাসির কারণ জানতে পারি ? আর আমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলুন। আমি রাজ্য সরকারের উকিল ছিলাম ।
কেয়ার টেকার :মস্করা করবেন না মশাই।
মেঘনাদ : আগের সরকারের আমলে ।
কেয়ার টেকার : ও তাই বলুন ।
মেঘনাদ : মানে ? আপনার এমন অসভ্যের মতো হাসির কারণ কী ? সোজা কোর্টে গিয়ে মামলা ঠুকে দেব ।
কেয়ার টেকার : আপনাকে কি অর্জুন দা এই নাকতলাতেই আসতে বলেছেন ?
মেঘনাদ : কতবার বলব ভাই ? তুমি বিশ্বাস না করলে আমার কিছু করার আছে ?
কেয়ার টেকার আবার হেসে উঠে বলল ,""মিনিষ্টার স্যার রসিকতাও জানেন ।""
মেঘনাদ : কেন ? কীসের রসিকতা ?
কেয়ার টেকার : এইটা তো ওনার কুকুরের ফ্ল্যাট । এখানে শুধু কুকুর থাকে আর আমি থাকি ।
এই বলে আরও বিদঘুটে চিৎকারে শিপাঞ্জির মতো হেসে উঠল অর্জুন চ্যাটার্জীর কেয়ার টেকার । মেঘনাদ বাবুর বুটের সুকতলা সেই হাসির চিৎকারে আর অপমানে ঘেমে গেল ।
মেঘনাদ : "মিনিষ্টার স্যারকে ফোন করুন এখনই ।"
কেয়ার টেকার তাড়াতাড়ি ফোন করলেন শিক্ষামন্ত্রীকে। তারপর ফোনটা আস্তে আস্তে নামিয়ে মেঘনাদ বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন , "উনি আপনাকে এখানেই বসতে বলেছেন। ঘরের ভিতর।"
মেঘনাদ ঘরে ঢুকতেই ৪ , ৫ খানা কুকুর তাঁর দিকে ঘেউ ঘেউ করে ছুটে এলো । একটা কুকুর তাঁর কোর্টের ঝুলে কামড় বসিয়ে দিল । কেয়ার টেকার পাঁচ মিনিটের প্রচেষ্টায় সব কটা কুকুরকে শান্ত করল। মেঘনাদ বাবুকে বসতে দিল সোফায় । হাঁপাতে হাঁপাতে বসলেন মেঘনাদ ।
মেঘনাদ বাবু তাঁর পার্টির সোনালি দিনগুলো কিছুতেই ভুলতে পারেন না । সেই উত্তাল মিছিলের ভিড়। পার্টির হয়ে একের পর এক কেস তারপর হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের উকিল হিসেবে যোগ । সরকার পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে হাই স্কুলের একটা বিশাল দুর্নীতি উনি নিজে হাতেই ঠেকিয়ে ছিলেন । আজ সেই সোনালি দিন অতীত । পার্টি ক্রমশ ম্রিয়মান প্রদীপের মতো নিভে যাচ্ছে । তাঁর ইচ্ছে করছে এই প্রদীপের শিখাটা কোনো একদিন জ্বালাবেন । স্তালিনের ফ্যান তিনি । স্তালিনের মতো গোঁফ রাখেন । তাঁর প্রতিটা মুহূর্তে ইচ্ছে করে একটা লাল ফৌজ নিয়ে তিনি কালো কোর্ট পড়ে এগিয়ে চলেছেন । যে কুকুরগুলো এখনও তার দিকে ভুকে চলেছেন, তিনি যেন তাদের মধ্যে তাঁর অধীনের লাল ফৌজকে দেখতে পাচ্ছেন । চারদিকে যেন ধ্বনিত হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিকালে বেজে ওঠা সোভিয়েত মার্চের বিউগল । ২ ঘণ্টা কেটে গেছে । শিক্ষামন্ত্রীর দেখা নেই । কুকুরগুলো নেতিয়ে পড়েছে ।
অন্যদিকে অনিমেষের ট্রেন এসে পৌঁছালো সিউড়ী ষ্টেশনে । ট্রেন থেকে নামতেই দেখল ১০-১২ টা পুলিশ কিছু একটা খুঁজছে । অনিমেষ ওদিকে না তাকিয়ে ওভার ব্রিজের দিকে হাঁটতে থাকল । পিছন পিছন একটা পুলিশ আসছে। কয়েকটা পা সিঁড়ি দিয়ে হাঁটতেই পিছন থেকেই সেই পুলিশ ডাক দিল , " এই শুয়োরের বাচ্চা । দাঁড়া ।"
অনিমেষ পিছন ঘুরে তাকালো ।
"নাম নাম । শোন এদিকে " আরও তিন চার জন পুলিশ কনস্টেবল এগিয়ে এল ।
" নাম কী তোর ?" অফিসার জানতে চাইল ।
" অনিমেষ হালদার ।"
"চল , আমাদের সাথে ।" পুলিশ অফিসার ।
"কী করলাম ?" , অনিমেষ বলল ।
পুলিশ : "ফেসবুকে বিপ্লব মাড়িয়েছিস "
অনিমেষ : "কেন ?"
পুলিশ : " ইয়াকুব মেনন কি তোর মা কে দিতে আসত , শুয়োরের বাচ্চা ?"
অনিমেষ : "ইয়াকুব একজন জঙ্গি । আমাদের দেশের শত্রু । কিন্তু ফাঁসি ?"
পুলিশ অফিসার ঠাটিয়ে এক চড় মারল অনিমেষের গালে । অনিমেষ ষ্টেশনে লুটিয়ে পড়ল। এতোক্ষণে ষ্টেশনের ভিড় জড়ো হয়েছিল বিষয়টা বোঝার জন্য । লোকজন ভাবতে লাগল অনিমেষ জঙ্গিদের সমর্থনে ফেসবুক পোষ্ট করেছে । ষ্টেশনের ভিড় থেকে একজন কোনো কিছু না বুঝেই অনিমেষকে লক্ষ্য করে পায়ের চটি ছুঁড়ে মারল । অনিমেষ চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলল , " কিছু না জেনেই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করলেন ? কোনোদিন আপনাদের নিজের পরিবারের কারও সাথে এমন হোক , সেদিন বুঝবেন ন্যাচারাল জাষ্টিস কাকে বলে । জয় ভীম । জয় সংবিধান ।"
সমস্ত সিউড়ী ষ্টেশন অনিমেষের এই উদাত্ত কণ্ঠের জয় ভীম ধ্বনিতে কেঁপে উঠল । পাশ দিয়ে একটা এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটে গেল । পুলিশ অফিসার অনিমেষের চুলের মুটি ধরে তুলে বললেন , " এই শুয়োরের বাচ্চাকে গাড়িতে তোল ।"
অন্যদিকে আজ শুভব্রতর ফ্ল্যাটে এসেছে বসিরহাটের রমজান মণ্ডল । TRSG এর নতুন সদস্য। বয়স ১৮ । সে আবার সারা রাত অন্ধকারের মধ্যে বসিরহাট জুড়ে ইয়াকুব মেননের ফাঁসির বিরোধিতা করে পোষ্টার সাঁটিয়েছে । ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে কিছুটা রাষ্ট্রবিরোধী মানসিকতা রয়ে গেছে । পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের ফ্যান। কিন্তু চালাক আছে । ফেসবুকে কিছু পোষ্ট করেনি । শুভব্রতর ফ্ল্যাটে ঢুকে অনিমেষের ব্যাপারে শুনে হাসতে শুরু করল রমজান ।
শুভব্রত :মালটা পুরো তারকাটা ।
রমজান : ফেসবুকে শালা এইসব কেউ পোষ্ট করে ?
শুভব্রত :তুই কী করলি ?
রমজান :সারা রাত পোষ্টার সাঁটালাম ।
শুভব্রত : ওসব বালছাল কাজ বন্ধ কর । অনেক কাজ আছে ।
রমজান : মালটা কী পুলিশে ধরা পড়বে ?
শুভব্রত : হয়তো এতোক্ষণে ধরা পড়ে গেছে । তবে বেশি কিছু হবে না । ওর যুক্তি ফাঁসি নামক প্রক্রিয়াটার বিরুদ্ধে । সরকারবিরোধী নয় । বরঞ্চ ও সরকারের পক্ষেই । তুই তো শালা পুরোপুরি রাষ্ট্রবিরোধী । যেদিন পুলিশের হাতে ধরা পড়বি পিটিয়ে লাল করে দেবে ।
রমজান : তোমার সেই উকিল বাবু আমাকে বাঁচাবে না ?
শুভব্রত : কোন উকিল ?
রমজান : তুমি যাকে মামা বলো । ওই প্রকাশ ভট্টাচার্য ।
শুভব্রত : প্রকাশ ভট্টাচার্য ? বুঝে শুনে কাজ করলে বাঁচাতে পারে । তুই তো শালা মনে মনে পাকিস্তানি । কোনদিন আমাদের TRSG কে ফাঁসিয়ে দিবি ।
রমজান : আমাকে কী তুমি অনিমেষের মতো গর্ধব ভেবেছো নাকি ? পারে না বাল ছিঁড়তে , উঠে বসে রাত থাকতে ।
শুভব্রত : আর একটাও মুরগী পেলি TRSG এর জন্য ?
রমজান : না । কেউ তো চাকরি পাওয়ার এই লাইনটা বিশ্বাসই করতে চাইছে না । কেউ ৭ লাখ টাকা একবারে বার করতে রাজি হয় ?
শুভব্রত : না করাটাই স্বাভাবিক । শোন তবে , ফার্স্ট ফেজে কিন্তু আমাদের কোনো নিয়োগ হবে না । মানে আমরা ভুয়ো মালগুলো সব ভোগে ।
রমজান : তবে আমরা কী ভেন্টিলেটার দিয়ে ঢুকব ।
শুভব্রত : প্রথম ফেসে প্রাইমারিতে ৪০০০০ এর কাছাকাছি ফ্রেশ ছেলেরা ঢুকবে । যারা সম্পূর্ণ নির্ভেজাল যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। মুখ্যমন্ত্রীর হুকুম আছে ।
রমজান : কেন ?
শুভব্রত : চিটফাণ্ড স্ক্যামে পার্টি চুলকে আছে । সি এম এর অর্ডার আছে , নো মোর স্ক্যাম ইন প্রাইমারি ।
রমজান : তবে আমরা TRSG এর নামে লাখ লাখ টাকা তুলছি কেন ? আমরা নিজেরা টাকা দিলামই বা কেন ?
শুভব্রত : প্রকাশ ভট্টাচার্য শিক্ষা দপ্তরের সাথে নেক্সাস করে রেখেছে । আমাদেরকে ৩ , ৪ বছর পর ভেন্টিলেটর দিয়ে প্রাইমারিতে ঢুকিয়ে দেবে ।
রমজান : কীভাবে ঢোকাবে ? এই নেক্সাসটা কী জিনিস? আর প্রকাশ ভট্টাচার্য তো বিরোধী পার্টির উকিল ? মুখ্যমন্ত্রীর চোখ এড়িয়ে আমরা চোরাপথে ঢুকতে পারব ?
শুভব্রত: প্রকাশ ভট্টাচার্য কলকাতা হাইকোর্টের ডন । উনি দিনকে রাত , রাতকে দিন করে দিতে পারেন । মুখ্যমন্ত্রী কিচ্ছু টের পাবে না ।প্রকাশ ভট্টাচার্য চুলকুনি করা কেস করে নিয়োগটা আটকে রাখবে ১ বছর । ১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কিছুতেই এই নিয়োগ করতে দেবেন না । আর আমাদের মতো জালি মালদের আরও দু তিন বছর ওয়েট করতে হতে পারে ।
রমজান গাঁজায় একটা টান দিয়ে বলল , " আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। টাকাও দেব তাও ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকব ? ফার্স্ট ফেসে সোনার চাঁদগুলো ঢুকবে ?"
শুভব্রত : আরে বাঁড়া । সবুরে মেয়া ফলে। মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারলে আমরা সবাই ভোগে । তাই একটু সবুর তো করতেই হবে । ততদিন TRSG বিপ্লবী বঞ্চিত বানচোদ সেজে থাকবে । আর পাশাপাশি আমাদের গাঁজার ব্যবসাটা চলবে ।
অন্যদিকে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর শিক্ষামন্ত্রী অর্জুন চ্যাটার্জী ঢুকলেন তাঁর নাকতলার ফ্ল্যাটে। সঙ্গে ৩ জন সাগরেদ । মেঘনাদ ভট্টাচার্য আজ কোর্টে না গিয়ে ৪ ঘণ্টা ধরে বসে ৬ টা কুকুরের সাথে বসে আছেন অর্জুন চ্যাটার্জীর ফ্ল্যাটে ।
অর্জুন : নমস্কার উকিল বাবু । অনেক দেরি হয়ে গেল । একি মেঘনাদ বাবু আপনার কোর্টের এই অবস্থা কেন ? এই দুষ্টুগুলো করেছে বুঝি ??
মেঘনাদ : আমি ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করছি । এসবের কি কোনো দরকার ছিল ? কী ক্ষতি করেছি আমি আপনার ?
অর্জুন : ক্ষতি ? কেন কুকুরগুলোকে আপনার পছন্দ হয়নি ?
মেঘনাদ : ইয়ার্কি রাখুন । আর আমার টাকাটা কবে পাব ?
অর্জুন : কীসের টাকা ? যে জালিয়াত সরকারটাকে আপনি ৫ বছর আগে ডিফেণ্ড করতেন তার টাকা ?
মেঘনাদ : দেখুন । আপনারা তো উল্টে দিয়েছেন সেই সরকার । এখন এতো রাগ কেন ?
অর্জুন : মনে পড়ে ২০০৯ সালের কথা ? আমি তখন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা । হাইস্কুলে বিরাট স্ক্যাম হলো । আমি ক্যাগ রিপোর্ট তৈরি করলাম । আর আপনি SSC এর উকিল হয়ে পুরো রিপোর্টটাকে হাপিস করে দিলেন । মনে আছে ?
মেঘনাদ : আপনারাও তো চুরি করছেন এখন? আমরা কিছু চুলকিয়েছি কি ?
অর্জুন : মুখমন্ত্রীর হুকুম আছে। আগামী প্রাইমারি রিক্রুটমেন্টে একটা দুর্নীতি দেখলে আমাকে শুদ্ধ জেলে পুরে দেবেন ।
মেঘনাদ : বাজারে দালালরা যে লাখ লাখ টাকা তুলছে সে খবর আমার কাছে আছে ।
অর্জুন : যারা দালালদের টাকা দিচ্ছে , তারা কেউ চাকরি পাবে না । চাকরি যোগ্যরাই পাবে । মুখ্যমন্ত্রীর হুকুম ।
মেঘনাদ : আপনি তার মানে এখন সতী সাবিত্রী । মুখ্যমন্ত্রীর হুকুম ছাড়া এক পা হাঁটেন না ?
অর্জুন : আপনিও তো আপনার ওই হাইকোর্টের গুরুদেব প্রকাশ ভট্টাচার্যের হুকুম ছাড়া মুততে অবধি পারেন না ।
মেঘনাদ : আমার টাকাটা ?
অর্জুন : আপনার গুরুদেব প্রকাশ বাবু সব জানেন । ওঁর সাথে শিক্ষাদপ্তরের নেক্সাস চলছে । মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু জানে না । জানলে আমাদের সবাইকে আউট করে দেবে ।
মেঘনাদ : কীসের নেক্সাস ? আমার টাকা কবে পাব ?
অর্জুন : ওই টাকার শোক ভুলে যান । মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দিয়ে আমরা ভুয়ো মাল চাকরিতে ঢোকাতে পারব না । প্রথম ফেসের নিয়োগের পরে ভুয়ো দু তিন হাজার মাল পিছনের গেট দিয়ে ঢোকাতে হবে । আপনার প্রকাশ দা সাহায্য করবে । আপনি গুরুদেবের দয়ায় কিছু বখরা পেতে পারেন । অবাধ্য গর্ধবের মতো বসে না থেকে গুরুদেবের পায়ের তলায় গিয়ে বসুন । দেখুন কোনো পোষ্ট পান কি না ।
অন্যদিকে সিউড়ী থানার লক আপে অকথ্য অত্যাচার চলল অনিমেষের ওপর । রুলের বাড়িতে লাল হয়ে গেছে সারা পিঠ । দরদর করে ঘাম হচ্ছে সারা রাত ধরে। জ্বর এসেছে। কখনও ব্যথার ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়া । কখনও সেই ব্যথার চোটেই ঘুমের অন্ধকার থেকে জেগে ওঠা । সারারাত তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ শুধু দেখতে পাচ্ছে সেই ছায়াপথ । কানে বাজছে শুভব্রতর কথা । মাত্র ৮ আলোকবর্ষ দূরে আছে ৩২০০০ নক্ষত্রের ছায়াপথ । যা ইতিমধ্যেই কৃষ্ণগহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে । আর অতীত ধ্বংসের সেই আলোর মৃত্যু যখন ভবিষ্যৎ রূপে ধরা দেবে চোখে তখন ২০২৩ সাল । ৮ বছর হয়ে গেছে । অথবা অনিমেষ নিজেই সেই ছায়াপথের অংশ হয়ে গেছে । বিজ্ঞান বলছে এতো কাছাকাছি কোনো ছায়াপথ নেই । শুভব্রত বলছে আছে।
© ALL RIGHTS RESERVED