কৃষ্ণগহ্বরে ৩২০০০ নক্ষত্রপতন। শিক্ষামন্ত্রীর ফ্ল্যাটে SSC উকিল। PART- 2

by YouTech


Posted on : Wednesday, 14th February 24 , 06:43 PM


Disclaimer



This story is a work of fiction. Any resemblance to actual persons, living or dead, or events is coincidental. The author takes creative liberties with characters and events. The story is not intended to harm or defame any individual or group. Readers should interpret its content with discretion.



সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক










প্রথম পর্ব:   ফাঁকা ফ্ল্যাটে মনুস্মৃতি


দ্বিতীয় পর্ব: শিক্ষামন্ত্রীর জালে SSC উকিল





 
Part 2: শিক্ষামন্ত্রীর জালে SSC উকিল




SSC এর প্রাক্তন উকিল মেঘনাদ গাঙ্গুলি । এই মুহূর্তে হাতে তেমন কোনো মামলা পাচ্ছেন না । তাঁর বিদ্রোহী স্বভাবের জন্য কোলকাতা হাইকোর্টের বাকি উকিলরা খুবই পিছনে লাগে । তথাপি কথায় কথায় রেগে যাওয়া স্বভাবটা তাঁর যায়নি । সরকারের উকিল থাকাকালীন তাঁর প্রচুর টাকা বকেয়া আছে । সরকার পাল্টি খাওয়ার পর তিনি বর্তমান সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ হননি । ছোটবেলা থেকে একগুঁয়ে । পার্টিকে ভালোবাসেন। তাই সরকার পাল্টি খেলেও জামা পাল্টাননি উকিল হিসেবে । অতঃপর বর্তমান সরকারের চক্ষুশূল হয়েছেন । আগষ্ট পড়ে গেছে। বৃষ্টি আজও থামেনি । সারা কোলকাতা জলমগ্ন।








অনিমেষদের বীরভূমের গ্রামে ময়ূরাক্ষীর জল ঢুকে গেছে । অনিমেষ এখন ট্রেনে। শেষমেষ নৌকা করে বাড়ি পৌঁছতে হবে । না নদীতে নয় । বন্যামগ্ন গ্রামের ওপর দিয়ে যাবে অনিমেষের নৌকা ।ফেসবুক প্রোফাইলে নতুন ফ্রেণ্ড রিকুয়েষ্ট এল । খুলতেই দেখা গেল শুভব্রত পাঠিয়েছে । অনিমেষের অন্য একটা ফেসবুক পোষ্টে রিপোর্ট পড়েছে । ফেসবুকে ইয়াকুব মেননের ফাঁসির বিরোধিতা করেছিল অনিমেষ। গত পরশু দিন ৩০ জুলাই , ২০১৫ , ইয়াকুব মেননের ফাঁসি কার্যকর হয় । কিন্তু অনিমেষ জঙ্গিবাদকে মোটেই পছন্দ করে না । শুভব্রত প্রশ্ন করাতে অনিমেষ জানালো , " ইয়াকুব একজন জঙ্গি । কিন্তু রাষ্ট্র উদার । এই পার্থক্যটা থাকা উচিত । যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুহত্যা আর নিরস্ত্র শত্রুকে বন্দি করে হত্যার মধ্যে পার্থক্য আছে । যে কোনো মৃত্যু আমাকে কাঁদায় । ইয়াকুব আমাদের শত্রু । কিন্তু আমি চিরকাল ফাঁসির বিরোধী "






"তুই শালা কোনদিন , গারদে ঢুকবি । পুলিশ তোর কোনো যুক্তির চুলকানি শুনবে না । জঙ্গির ফাঁসির বিরোধী মানে তুইও জঙ্গি " - শুভব্রত বলল ।




অনিমেষ : "আমি জঙ্গিদের সহ্য করতে পারি না , কিন্তু ফাঁসি ... "




শুভব্রত : "তোর এই গান্ধীবাদ একদিন তোর সর্বনাশ করবে । অহিংসার চুলকানি একদিন তোর নিজের গাঁড়ে ঢুকবে । পুলিশ ক্যালালে তুই তোর যুক্তি মারাবি ??"




অনিমেষ : "পুলিশ না শুনুক আদালত শুনবে"




শুভব্রত : " কোনো বিচারক যদি sadist হয় তখন ?"




অনিমেষ : "কোনো বিচারক sadist হলেও আইন কখনও sadist হয় না ।"




শুভব্রত : " কানুন অন্ধা হো সাকতে হ্যায় লেকিন জাজ নেহি। তোর বাঁড়া খুব চুলকানি। বাড়ি পৌঁছালি ?"




অনিমেষ : " না ট্রেনে আছি । নেটের স্পীড কম । এখন রাখছি।"




ফেসবুকের মেসেঞ্জারে কথা চলছিল অনিমেষ আর শুভব্রতর।










অন্যদিকে SSC এর প্রাক্তন উকিল মেঘনাদ গাঙ্গুলির গাড়ি এসে দাঁড়ালো নাকতলার একটা বিরাট বহুতলের সামনে । সারা কলকাতার অনেক জলমগ্ন পথ পেরোতে হয়েছে । বৃষ্টি এখনও থামেনি । লিফ্টে উঠলেন ৫ তলায় । কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। তিনি এসেছেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অর্জুন চ্যাটার্জীর সাথে দেখা করতে । একেতেই হাতে কেস নেই । তার ওপর অন্যায়ভাবে তাঁর টাকা আটকে রেখেছে ওপর মহল । কত রথী মহারথী পাল্টি খেল । পাল্টি খাননি মেঘনাদ গাঙ্গুলি । আজও মনে আছে পার্টির হয়ে লড়া বহু কেস । হেরেছেন। জিতেছেন। তাঁর ভালোবাসার পার্টি এখন বিরোধী স্থানে । ক্রমশ তৃতীয় স্থানের দিকে এগোচ্ছে । তথাপি মেঘনাদ স্বপ্ন দেখেন একদিন ফিনিক্স হয়ে ফিরে আসবে তাঁর পার্টি । সেদিন এই সব অপমানের বদলা নেবেন তিনি । তা যদি না হয় তিনি হিমালয়ে চলে যাবেন অথবা বিরাট বিপ্লব করবেন অন্য কোনো ভাবে । ভালো হোক খারাপ হোক বর্তমান সরকারের ওপর শোধ তুলেই ছাড়বেন মেঘনাদ গাঙ্গুলি ।




তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অর্জুন চ্যাটার্জীর ফ্ল্যাটের দরজা খুললেন একজন কেয়ার টেকার । ভিতর থেকে কুকুরের আওয়াজ আসছে । মনে হয় ভিতরে একটা নয় দুটো কুকুর আছে ।




কেয়ার টেকার : কে আপনি ?




মেঘনাদ গাঙ্গুলি : "অর্জুন দা আপনাকে কিছু বলেননি ?"




কেয়ার টেকার : "না দাদা । বলেননি ।"




মেঘনাদ গাঙ্গুলি : "আমার শিক্ষামন্ত্রীর সাথে যে সকালে কথা হলো ।"




কেয়ার টেকার : "তাই বলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিয়ে আপনি নাকতলায় চলে আসবেন ?"




মেঘনাদ : "কে বলল নিইনি । সকালে আমি ওঁকে ফোন করেছি ।"




কেয়ার টেকার : "ছাই করেছেন । উনি আপনাকে নাকতলায় আসতে বলেছেন ?"




মেঘনাদ : " হ্যাঁ, বললেন তো ।"




কথাটা শোনা মাত্রই অর্জুন চ্যাটার্জীর ফ্ল্যাটের ওই কেয়ার টেকার আফিম খাওয়া চিড়িয়াখানার শিম্পাঞ্জির মতো খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠল । প্রায় ৪০ সেকেণ্ড তার হাসি চলল। আর সেই হাসি ফ্ল্যাটের নীচতলা থেকে উপরতলা অবধি গমগম করে উঠল । অবশেষে মেঘনাদ গাঙ্গুলি ধমক দিলেন ।




মেঘনাদ : এই আস্তে হাসুন । থুতু ছিটছে । এমন ভুতের মতো হাসির কারণ জানতে পারি ? আর আমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলুন। আমি রাজ্য সরকারের উকিল ছিলাম ।








কেয়ার টেকার :মস্করা করবেন না মশাই।




মেঘনাদ : আগের সরকারের আমলে ।




কেয়ার টেকার : ও তাই বলুন ।




মেঘনাদ : মানে ? আপনার এমন অসভ্যের মতো হাসির কারণ কী ? সোজা কোর্টে গিয়ে মামলা ঠুকে দেব ।




কেয়ার টেকার : আপনাকে কি অর্জুন দা এই নাকতলাতেই আসতে বলেছেন ?




মেঘনাদ : কতবার বলব ভাই ? তুমি বিশ্বাস না করলে আমার কিছু করার আছে ?




কেয়ার টেকার আবার হেসে উঠে বলল ,""মিনিষ্টার স্যার রসিকতাও জানেন ।""




মেঘনাদ : কেন ? কীসের রসিকতা ?




কেয়ার টেকার : এইটা তো ওনার কুকুরের ফ্ল্যাট । এখানে শুধু কুকুর থাকে আর আমি থাকি ।




এই বলে আরও বিদঘুটে চিৎকারে শিপাঞ্জির মতো হেসে উঠল অর্জুন চ্যাটার্জীর কেয়ার টেকার । মেঘনাদ বাবুর বুটের সুকতলা সেই হাসির চিৎকারে আর অপমানে ঘেমে গেল ।








মেঘনাদ : "মিনিষ্টার স্যারকে ফোন করুন এখনই ।"




কেয়ার টেকার তাড়াতাড়ি ফোন করলেন শিক্ষামন্ত্রীকে। তারপর ফোনটা আস্তে আস্তে নামিয়ে মেঘনাদ বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন , "উনি আপনাকে এখানেই বসতে বলেছেন। ঘরের ভিতর।"




মেঘনাদ ঘরে ঢুকতেই ৪ , ৫ খানা কুকুর তাঁর দিকে ঘেউ ঘেউ করে ছুটে এলো । একটা কুকুর তাঁর কোর্টের ঝুলে কামড় বসিয়ে দিল । কেয়ার টেকার পাঁচ মিনিটের প্রচেষ্টায় সব কটা কুকুরকে শান্ত করল। মেঘনাদ বাবুকে বসতে দিল সোফায় । হাঁপাতে হাঁপাতে বসলেন মেঘনাদ ।






মেঘনাদ বাবু তাঁর পার্টির সোনালি দিনগুলো কিছুতেই ভুলতে পারেন না । সেই উত্তাল মিছিলের ভিড়। পার্টির হয়ে একের পর এক কেস তারপর হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের উকিল হিসেবে যোগ । সরকার পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে হাই স্কুলের একটা বিশাল দুর্নীতি উনি নিজে হাতেই ঠেকিয়ে ছিলেন । আজ সেই সোনালি দিন অতীত । পার্টি ক্রমশ ম্রিয়মান প্রদীপের মতো নিভে যাচ্ছে । তাঁর ইচ্ছে করছে এই প্রদীপের শিখাটা কোনো একদিন জ্বালাবেন । স্তালিনের ফ্যান তিনি । স্তালিনের মতো গোঁফ রাখেন । তাঁর প্রতিটা মুহূর্তে ইচ্ছে করে একটা লাল ফৌজ নিয়ে তিনি কালো কোর্ট পড়ে এগিয়ে চলেছেন । যে কুকুরগুলো এখনও তার দিকে ভুকে চলেছেন, তিনি যেন তাদের মধ্যে তাঁর অধীনের লাল ফৌজকে দেখতে পাচ্ছেন । চারদিকে যেন ধ্বনিত হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিকালে বেজে ওঠা সোভিয়েত মার্চের বিউগল । ২ ঘণ্টা কেটে গেছে । শিক্ষামন্ত্রীর দেখা নেই । কুকুরগুলো নেতিয়ে পড়েছে ।












অন্যদিকে অনিমেষের ট্রেন এসে পৌঁছালো সিউড়ী ষ্টেশনে । ট্রেন থেকে নামতেই দেখল ১০-১২ টা পুলিশ কিছু একটা খুঁজছে । অনিমেষ ওদিকে না তাকিয়ে ওভার ব্রিজের দিকে হাঁটতে থাকল । পিছন পিছন একটা পুলিশ আসছে। কয়েকটা পা সিঁড়ি দিয়ে হাঁটতেই পিছন থেকেই সেই পুলিশ ডাক দিল , " এই শুয়োরের বাচ্চা । দাঁড়া ।"




অনিমেষ পিছন ঘুরে তাকালো ।




"নাম নাম । শোন এদিকে " আরও তিন চার জন পুলিশ কনস্টেবল এগিয়ে এল ।




" নাম কী তোর ?" অফিসার জানতে চাইল ।




" অনিমেষ হালদার ।"




"চল , আমাদের সাথে ।" পুলিশ অফিসার ।




"কী করলাম ?" , অনিমেষ বলল ।




পুলিশ : "ফেসবুকে বিপ্লব মাড়িয়েছিস "




অনিমেষ : "কেন ?"




পুলিশ : " ইয়াকুব মেনন কি তোর মা কে দিতে আসত , শুয়োরের বাচ্চা ?"




অনিমেষ : "ইয়াকুব একজন জঙ্গি । আমাদের দেশের শত্রু । কিন্তু ফাঁসি ?"




পুলিশ অফিসার ঠাটিয়ে এক চড় মারল অনিমেষের গালে । অনিমেষ ষ্টেশনে লুটিয়ে পড়ল। এতোক্ষণে ষ্টেশনের ভিড় জড়ো হয়েছিল বিষয়টা বোঝার জন্য । লোকজন ভাবতে লাগল অনিমেষ জঙ্গিদের সমর্থনে ফেসবুক পোষ্ট করেছে । ষ্টেশনের ভিড় থেকে একজন কোনো কিছু না বুঝেই অনিমেষকে লক্ষ্য করে পায়ের চটি ছুঁড়ে মারল । অনিমেষ চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলল , " কিছু না জেনেই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করলেন ? কোনোদিন আপনাদের নিজের পরিবারের কারও সাথে এমন হোক , সেদিন বুঝবেন ন্যাচারাল জাষ্টিস কাকে বলে । জয় ভীম । জয় সংবিধান ।"








সমস্ত সিউড়ী ষ্টেশন অনিমেষের এই উদাত্ত কণ্ঠের জয় ভীম ধ্বনিতে কেঁপে উঠল । পাশ দিয়ে একটা এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটে গেল । পুলিশ অফিসার অনিমেষের চুলের মুটি ধরে তুলে বললেন , " এই শুয়োরের বাচ্চাকে গাড়িতে তোল ।"












অন্যদিকে আজ শুভব্রতর ফ্ল্যাটে এসেছে বসিরহাটের রমজান মণ্ডল । TRSG এর নতুন সদস্য। বয়স ১৮ । সে আবার সারা রাত অন্ধকারের মধ্যে বসিরহাট জুড়ে ইয়াকুব মেননের ফাঁসির বিরোধিতা করে পোষ্টার সাঁটিয়েছে । ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে কিছুটা রাষ্ট্রবিরোধী মানসিকতা রয়ে গেছে । পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের ফ্যান। কিন্তু চালাক আছে । ফেসবুকে কিছু পোষ্ট করেনি । শুভব্রতর ফ্ল্যাটে ঢুকে অনিমেষের ব্যাপারে শুনে হাসতে শুরু করল রমজান ।




শুভব্রত :মালটা পুরো তারকাটা ।




রমজান : ফেসবুকে শালা এইসব কেউ পোষ্ট করে ?




শুভব্রত :তুই কী করলি ?




রমজান :সারা রাত পোষ্টার সাঁটালাম ।




শুভব্রত : ওসব বালছাল কাজ বন্ধ কর । অনেক কাজ আছে ।




রমজান : মালটা কী পুলিশে ধরা পড়বে ?




শুভব্রত : হয়তো এতোক্ষণে ধরা পড়ে গেছে । তবে বেশি কিছু হবে না । ওর যুক্তি ফাঁসি নামক প্রক্রিয়াটার বিরুদ্ধে । সরকারবিরোধী নয় । বরঞ্চ ও সরকারের পক্ষেই । তুই তো শালা পুরোপুরি রাষ্ট্রবিরোধী । যেদিন পুলিশের হাতে ধরা পড়বি পিটিয়ে লাল করে দেবে ।




রমজান : তোমার সেই উকিল বাবু আমাকে বাঁচাবে না ?




শুভব্রত : কোন উকিল ?




রমজান : তুমি যাকে মামা বলো । ওই প্রকাশ ভট্টাচার্য ।




শুভব্রত : প্রকাশ ভট্টাচার্য ? বুঝে শুনে কাজ করলে বাঁচাতে পারে । তুই তো শালা মনে মনে পাকিস্তানি । কোনদিন আমাদের TRSG কে ফাঁসিয়ে দিবি ।




রমজান : আমাকে কী তুমি অনিমেষের মতো গর্ধব ভেবেছো নাকি ? পারে না বাল ছিঁড়তে , উঠে বসে রাত থাকতে ।










শুভব্রত : আর একটাও মুরগী পেলি TRSG এর জন্য ?




রমজান : না । কেউ তো চাকরি পাওয়ার এই লাইনটা বিশ্বাসই করতে চাইছে না । কেউ ৭ লাখ টাকা একবারে বার করতে রাজি হয় ?




শুভব্রত : না করাটাই স্বাভাবিক । শোন তবে , ফার্স্ট ফেজে কিন্তু আমাদের কোনো নিয়োগ হবে না । মানে আমরা ভুয়ো মালগুলো সব ভোগে ।




রমজান : তবে আমরা কী ভেন্টিলেটার দিয়ে ঢুকব ।




শুভব্রত : প্রথম ফেসে প্রাইমারিতে ৪০০০০ এর কাছাকাছি ফ্রেশ ছেলেরা ঢুকবে । যারা সম্পূর্ণ নির্ভেজাল যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। মুখ্যমন্ত্রীর হুকুম আছে ।




রমজান : কেন ?




শুভব্রত : চিটফাণ্ড স্ক্যামে পার্টি চুলকে আছে । সি এম এর অর্ডার আছে , নো মোর স্ক্যাম ইন প্রাইমারি ।




রমজান : তবে আমরা TRSG এর নামে লাখ লাখ টাকা তুলছি কেন ? আমরা নিজেরা টাকা দিলামই বা কেন ?




শুভব্রত : প্রকাশ ভট্টাচার্য শিক্ষা দপ্তরের সাথে নেক্সাস করে রেখেছে । আমাদেরকে ৩ , ৪ বছর পর ভেন্টিলেটর দিয়ে প্রাইমারিতে ঢুকিয়ে দেবে ।




রমজান : কীভাবে ঢোকাবে ? এই নেক্সাসটা কী জিনিস? আর প্রকাশ ভট্টাচার্য তো বিরোধী পার্টির উকিল ? মুখ্যমন্ত্রীর চোখ এড়িয়ে আমরা চোরাপথে ঢুকতে পারব ?




শুভব্রত: প্রকাশ ভট্টাচার্য কলকাতা হাইকোর্টের ডন । উনি দিনকে রাত , রাতকে দিন করে দিতে পারেন । মুখ্যমন্ত্রী কিচ্ছু টের পাবে না ।প্রকাশ ভট্টাচার্য চুলকুনি করা কেস করে নিয়োগটা আটকে রাখবে ১ বছর । ১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কিছুতেই এই নিয়োগ করতে দেবেন না । আর আমাদের মতো জালি মালদের আরও দু তিন বছর ওয়েট করতে হতে পারে ।




রমজান গাঁজায় একটা টান দিয়ে বলল , " আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। টাকাও দেব তাও ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকব ? ফার্স্ট ফেসে সোনার চাঁদগুলো ঢুকবে ?"




শুভব্রত : আরে বাঁড়া । সবুরে মেয়া ফলে। মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারলে আমরা সবাই ভোগে । তাই একটু সবুর তো করতেই হবে । ততদিন TRSG বিপ্লবী বঞ্চিত বানচোদ সেজে থাকবে । আর পাশাপাশি আমাদের গাঁজার ব্যবসাটা চলবে ।












অন্যদিকে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর শিক্ষামন্ত্রী অর্জুন চ্যাটার্জী ঢুকলেন তাঁর নাকতলার ফ্ল্যাটে। সঙ্গে ৩ জন সাগরেদ । মেঘনাদ ভট্টাচার্য আজ কোর্টে না গিয়ে ৪ ঘণ্টা ধরে বসে ৬ টা কুকুরের সাথে বসে আছেন অর্জুন চ্যাটার্জীর ফ্ল্যাটে ।




অর্জুন : নমস্কার উকিল বাবু । অনেক দেরি হয়ে গেল । একি মেঘনাদ বাবু আপনার কোর্টের এই অবস্থা কেন ? এই দুষ্টুগুলো করেছে বুঝি ??




মেঘনাদ : আমি ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করছি । এসবের কি কোনো দরকার ছিল ? কী ক্ষতি করেছি আমি আপনার ?




অর্জুন : ক্ষতি ? কেন কুকুরগুলোকে আপনার পছন্দ হয়নি ?




মেঘনাদ : ইয়ার্কি রাখুন । আর আমার টাকাটা কবে পাব ?




অর্জুন : কীসের টাকা ? যে জালিয়াত সরকারটাকে আপনি ৫ বছর আগে ডিফেণ্ড করতেন তার টাকা ?




মেঘনাদ : দেখুন । আপনারা তো উল্টে দিয়েছেন সেই সরকার । এখন এতো রাগ কেন ?




অর্জুন : মনে পড়ে ২০০৯ সালের কথা ? আমি তখন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা । হাইস্কুলে বিরাট স্ক্যাম হলো । আমি ক্যাগ রিপোর্ট তৈরি করলাম । আর আপনি SSC এর উকিল হয়ে পুরো রিপোর্টটাকে হাপিস করে দিলেন । মনে আছে ?




মেঘনাদ : আপনারাও তো চুরি করছেন এখন? আমরা কিছু চুলকিয়েছি কি ?




অর্জুন : মুখমন্ত্রীর হুকুম আছে। আগামী প্রাইমারি রিক্রুটমেন্টে একটা দুর্নীতি দেখলে আমাকে শুদ্ধ জেলে পুরে দেবেন ।




মেঘনাদ : বাজারে দালালরা যে লাখ লাখ টাকা তুলছে সে খবর আমার কাছে আছে ।




অর্জুন : যারা দালালদের টাকা দিচ্ছে , তারা কেউ চাকরি পাবে না । চাকরি যোগ্যরাই পাবে । মুখ্যমন্ত্রীর হুকুম ।




মেঘনাদ : আপনি তার মানে এখন সতী সাবিত্রী । মুখ্যমন্ত্রীর হুকুম ছাড়া এক পা হাঁটেন না ?




অর্জুন : আপনিও তো আপনার ওই হাইকোর্টের গুরুদেব প্রকাশ ভট্টাচার্যের হুকুম ছাড়া মুততে অবধি পারেন না ।








মেঘনাদ : আমার টাকাটা ?




অর্জুন : আপনার গুরুদেব প্রকাশ বাবু সব জানেন । ওঁর সাথে শিক্ষাদপ্তরের নেক্সাস চলছে । মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু জানে না । জানলে আমাদের সবাইকে আউট করে দেবে ।




মেঘনাদ : কীসের নেক্সাস ? আমার টাকা কবে পাব ?




অর্জুন : ওই টাকার শোক ভুলে যান । মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দিয়ে আমরা ভুয়ো মাল চাকরিতে ঢোকাতে পারব না । প্রথম ফেসের নিয়োগের পরে ভুয়ো দু তিন হাজার মাল পিছনের গেট দিয়ে ঢোকাতে হবে । আপনার প্রকাশ দা সাহায্য করবে । আপনি গুরুদেবের দয়ায় কিছু বখরা পেতে পারেন । অবাধ্য গর্ধবের মতো বসে না থেকে গুরুদেবের পায়ের তলায় গিয়ে বসুন । দেখুন কোনো পোষ্ট পান কি না ।










অন্যদিকে সিউড়ী থানার লক আপে অকথ্য অত্যাচার চলল অনিমেষের ওপর । রুলের বাড়িতে লাল হয়ে গেছে সারা পিঠ । দরদর করে ঘাম হচ্ছে সারা রাত ধরে। জ্বর এসেছে। কখনও ব্যথার ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়া । কখনও সেই ব্যথার চোটেই ঘুমের অন্ধকার থেকে জেগে ওঠা । সারারাত তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ শুধু দেখতে পাচ্ছে সেই ছায়াপথ । কানে বাজছে শুভব্রতর কথা । মাত্র ৮ আলোকবর্ষ দূরে আছে ৩২০০০ নক্ষত্রের ছায়াপথ । যা ইতিমধ্যেই কৃষ্ণগহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে । আর অতীত ধ্বংসের সেই আলোর মৃত্যু যখন ভবিষ্যৎ রূপে ধরা দেবে চোখে তখন ২০২৩ সাল । ৮ বছর হয়ে গেছে । অথবা অনিমেষ নিজেই সেই ছায়াপথের অংশ হয়ে গেছে । বিজ্ঞান বলছে এতো কাছাকাছি কোনো ছায়াপথ নেই । শুভব্রত বলছে আছে।








+